মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:০৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক।। বরিশালে এক মোটরসাইকেল আরোহীকে মারধর করে জনতার রোষানলে পড়লেন মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট। শেষ পর্যন্ত থানা পুলিশকে খবর দিয়েও তিনি শেষরক্ষা পাননি। সংক্ষুব্ধ জনতা ট্রাফিক সার্জেন্ট তারেক আহম্মেদকে একচোট দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর করেছে পুলিশের টহল গাড়ি। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির খবর পেয়ে কোতয়ালি থানা পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বিপুল সংখ্যক সদস্য নিয়ে সেখানে গিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১২ জুন) সন্ধা সাড়ে ৬টার দিকে বরিশাল নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শহরের নবগ্রাম রোড থেকে বের হয়ে তামিম নামে একজন মোটরসাইকেল আরোহী সিঅ্যান্ডবি রোড ধরে নথুল্লাবাদের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। কিছুটা পথ যাওয়ার পরে সেখানে ডিউটিরত বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাসান আহম্মেদের নির্দেশে কনস্টেবল ইব্রাহিম মোটরসাইকেলটি গতিরোধ করে কাজগপত্র দেখতে চান।
এসময় মোটরসাইকেল আরোহী তামিম সকল কাগজপত্র বের করে দেন। কিন্তু মোটরযানের মালিকানা বদলের কাগজটি তিনি দেখাতে ব্যর্থ হলে ট্রাফিক সার্জেন্ট হাসান একটি মামলা ঠুকে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান এবং কনস্টেবল ইব্রাহিমকে দিয়ে ২ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু এই টাকা দেওয়া সম্ভব না জানিয়ে তামিম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি অবহিত করেন। এতে হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে মোটরসাইকেল আরোহীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এই বিষয়টির প্রতিবাদ করলে তামিককে কনস্টেবল ইব্রাহিম ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। তখন মোটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গী প্রতিরোধে এগিয়ে গেলে তাকেও সড়কে ফেলে মারধর করে সার্জেন্ট হাসান আহম্মেদ।
এই বিষয়টি আশেপাশের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা প্রত্যক্ষ করে নিশ্চুপ থাকতে পারলেন না। অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি একত্রিত হয়ে দুই ট্রাফিক সার্জেন্টকে একচোট পিটুনি দেন। খবর পেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মহশিন একটি টহল গাড়ি নিয়ে সেখানে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করেন।
কিন্তু তিনি উল্টো ট্রাফিক সার্জেন্টের নির্দেশে ওই মোটরসাইকেল আরোহীকে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করলেও ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় পুলিশ সদস্যরা তাদের সিদ্ধান্তের অনড় থেকে মোটরসাইকেল আরোহীকে ফের টহল গাড়িতে টেনে তোলার চেষ্টা করলে সংক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে টহল গাড়িটি ভাঙচুর করে। পরে খবর পেয়ে কোতয়ালি মডেল থানার সহকারি কমিশনার (এসি) রাসেল বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়ে সেখানে গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে নেন।
মোটরসাইকেল আরোহীকে তামিম সময়ের আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন, সকল কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট হাসান তার কাছে অর্থ দাবি করেন। কিন্তু এই টাকা না দেওয়ায় তার মোটরসাইকেলে মামলা দিয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে বাকবিতন্ডা হলে সার্জেন্ট হাসান ও কনস্টেবল তাকে মারধর করেন। তখন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা এসে তাকে উদ্ধার করে ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্যকে উল্টো পিটুনি দেয়।
এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট কোতয়ালি থানা পুলিশের একটি টিম এনে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতেন বলেন। তখন নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে।বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার সহকারি কমিশনার (এসি) রাসেল জানান, তিনি সেখানে গিয়ে ট্রাফিক সার্জেন্টকে সরিয়ে নেন এবং মোটরসাইকেল আরোহীকে ছেড়ে দিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত হয়।তবে পুরো ঘটনাটি অস্বীকার করে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাসান আহম্মেদ বলছেন, মোটরসাইকেল আরোহীর সাথে একটা বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরবর্তীতে বিষয়টি সেখানেই মিমাংসা হয়ে গেছে।
Leave a Reply